স্কুল থেকে ঝরেপড়াদের রক্ষায় দই বিক্রেতা জিয়াউল হক

চাঁপাইনবাবগঞ্জের জিয়াউল হক। দই বিক্রি করে বই বিলানোর এই মানুষটি এবারের একুশে পদক পেয়েছেন। এই খবর পাওয়ার পর থেকে আনন্দ আর কৃতজ্ঞতা ছুঁয়ে গেছে ৯০ বছরের এই মানুষটিকে।

ভোলাহাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘জিয়াউল হকের অদম্য প্রচেষ্টায় তিনি দেশব্যাপী সুনাম অর্জন করেন। সবশেষে সমাজসেবা বিভাগে মর্যাদাপূর্ণ একুশে পদকের জন্য নির্বাচিত হন।’

ভোলাহাটের মুশরিভুজা গ্রামের বাসিন্দা জিয়াউল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয়। ‘খুব আনন্দ হচ্ছে। এত আনন্দ আমি ধরে রাখার জায়গা খুঁজে পাচ্ছি না,’ বলেন তিনি।

জিয়াউল হকের জন্ম ১৯৩৪ সালের ৬ জুন। তার বাবা তৈয়ব আলী মোল্লা ও মা শারিকুন নেছা। বাবা তৈয়ব আলী ছিলেন গোয়ালা। জিয়াউল হক ১১ বছর বয়সে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করলে তার আনুষ্ঠানিক শিক্ষারও সমাপ্তি ঘটে।

‘১৯৫৫ সালে এক টাকায় পাঁচ কেজি চাল কিংবা দৈনিক তিন জনের বেশি শ্রমিককে মজুরি দেওয়া যেত’ উলে−খ করে তিনি বলেন, ‘বাবা ছয় জনের সংসার চালাতে গিয়ে আমার পড়াশোনার খরচ দিতে পারছিলেন না। তিনি আমাকে স্কুল ছেড়ে তার সঙ্গে কাজে যোগ দিতে বলেছিলেন। তিনি আমাকে গরুর দুধ দিতেন, আমি দই বানিয়ে বিক্রি করতাম।’

দই বিক্রি করতে গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে বেড়ানো জিয়াউল হক একটু একটু করে সঞ্চয় করতেন। পাঁচ বছর পর হাতে কিছু টাকা এলে সিদ্ধান্ত নেন স্কুলের ঝরেপড়া শিশুদের জন্য কিছু করবেন। ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে জমিজমা কিনব না, বিলাসিতায় গা ভাসাব না। স্কুলের শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া থেকে রক্ষায় কাজ করব।’

জিয়াউল হক তার জমানো টাকা দিয়ে পাঠ্যবই কিনে মুসরিভুজা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করেন। প্রথমে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং পরে হাইস্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য দই বিক্রি করে বই কিনতে শুরু করেন তিনি।

‘সরকার যখন স্কুলের বই বিনামূল্যে দেওয়া শুরু করল, তখন আমি কলেজ থেকে ঝরে পড়াদের মধ্যে পাঠ্যপুস্তক দিতে উদ্যোগ নিই,’ বলেন তিনি। তিনি এক সময় উপলব্ধি করলেন পাঠ্যপুস্তক সমাজ গঠনে যথেষ্ট নয়। ‘যখন দেখলাম শুধু পাঠ্যবই দিয়ে সমাজ বিকশিত হবে না তখন গল্প, উপন্যাস, কবিতা, নন-ফিকশন ও ধর্মের বই কেনা শুরু করলাম।’

এভাবেই জিয়াউল হক তার বাড়িতে ১৪ হাজার বইয়ের পাঠাগার গড়ে তোলেন। এর নাম দেন ‘জিয়াউল হক সাধারণ পাঠাগার’। তার দই বিক্রি থেকে বছরে ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা জমাতেন তিনি। সামাজিক কাজে এই টাকা খরচ করতেন।

জিয়াউল হক বলেন, ‘শুরুর দিকে এ ......