নতুন মর্যাদায় অভিষিক্ত বাংলাদেশ

প্রকাশের সময় : 2019-06-13 17:43:22 | প্রকাশক : Administration নতুন মর্যাদায় অভিষিক্ত বাংলাদেশ

এম শাহজাহানঃ বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রভাবশালী ‘গ্রুপ-টোয়েন্টি’র নতুন অংশীদার হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। জি-২০’র সদস্য পদ লাভের পর অর্থনৈতিক দুনিয়ায় নতুন মর্যাদায় উচ্চারিত হবে স্বাধীন বাংলাদেশের নাম। সমষ্টিগতভাবে জি-২০’র অন্তর্ভুক্ত দেশসমূহ বিশ্বের মোট জাতীয় উৎপাদনের ৮৫ শতাংশ এবং বিশ্ব বাণিজ্যের ৮০ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে। আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের মধ্যে বড় এই অর্জন দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।

এর ফলে বিশ্ব বাণিজ্যে বড় অংশীদার হওয়ার সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। কাঙ্খিত রফতানি ও বিনিয়োগ হবে এদেশে। কমবে দারিদ্র্য, বাড়বে কর্মসংস্থান। সর্বশেষ গত এপ্রিল মাসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০২৪ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার প্রক্ষেপণ করেছে। সেই আলোকে ব্লুমবার্গের করা বিশ্লেষণে বাংলাদেশ সম্পর্কে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।

জানা গেছে, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) অবদান রাখার দিক থেকে মাথাপিছু প্রবৃদ্ধিতে সব দেশকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই সূচকে প্রথম তিন দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে মাথাপিছু প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৫ শতাংশ। একই হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে ভারত ও চীন। জনগণের ক্রয়ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে এই হিসাব করা হয়েছে। তবে প্রবৃদ্ধির যে ধারাবাহিকতা, তা বজায় রাখা সম্ভব হলে অদূর ভবিষ্যতে এই দুই দেশকেও টপকিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রযাত্রা এখন সারা বিশ্বের রোল মডেল। আইএমএফের পরিসংখ্যান মতে, নামিক জিডিপির ভিত্তিতে বর্তমানে বাংলাদেশ পৃথিবীর ৪৩তম বৃহৎ অর্থনীতি আর ক্রয় ক্ষমতা সমতার ভিত্তিতে দেশের অবস্থান ৩২তম। শুধু তাই নয়, ২০১৭ সালে দ্রুততর প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী শীর্ষ দশটি দেশের তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে। প্রাইস ওয়াটারহাউস কুপারসের তথ্যমতে, ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৮তম বৃহত্তম অর্থনীতি এবং ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের অবস্থান হবে ২৩তম।

এদিকে বিশ্লে−ষণে দেখা যায়, আগামী অর্থবছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতে দশমিক ৯ শতাংশ অবদান রাখবে বাংলাদেশের অর্থনীতি। একই পরিমাণ অবদান রাখবে কানাডা। আর এর পরই অবদান রাখবে ফিলিপিন্স, থাইল্যান্ড ও সৌদি আরব। আগামী ২০২৪ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশের এই অবদান অব্যাহত থাকবে। প্রসঙ্গত, জি-২০’র সদস্য রাষ্ট্রগুলো হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, রাশিয়া, সাউথ আফ্রিকা, তুরস্ক, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, মেক্সিকো, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাজ্য, চীন, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, সাউথ কোরিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। বিশ্বের প্রধান ও উদীয়মান অর্থনৈতিক পরাশক্তি সম্পন্ন দেশসমূহের মধ্যে পারস্পারিক সহযোগিতা, আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ছিল জি-২০ গঠনের উদ্দেশ্য।

গত কয়েক বছর ধরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে রেকর্ড অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ৬ অঙ্কের বৃত্ত ভেঙ্গে জিডিপি প্রবৃদ্ধি এখন ৮ এর ঘরে অবস্থান করছে। রূপকল্প-২১ সামনে রেখে এই জিডিপি দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে বাংলাদেশের সামনে। এলক্ষ্যে রফতানি বাড়াতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এছাড়া উৎপাদন বাড়াতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আসছে দেশে। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার।

শুধু তাই নয়, চলতি অর্থবছর (২০১৮-১৯) শেষে মোট দেশজ উৎপাদন অর্জনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর যৌথভাবে শীর্ষে থাকবে বাংলাদেশ ও ভারত। চলতি বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। কিন্তু বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্যমতে, অর্থবছর শেষে এই প্রবৃদ্ধি হবে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। এছাড়া আগামী অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।  -জনকণ্ঠ