নির্বাচনে কী ভাবছেন শিক্ষা নিয়ে!

প্রকাশের সময় : 2018-12-06 15:15:51 | প্রকাশক : Admin নির্বাচনে কী ভাবছেন শিক্ষা নিয়ে!

মাছুম বিল্লাহ: নির্বাচনের মাধ্যমে যারা দেশকে নেতৃত্ব দেবে, তারা চিরদিন থাকবে না। অবশ্যই পরবর্তী প্রজন্মকে সুযোগ দিতে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- তারাও কি একই ধরনের গণতান্ত্রিক চর্চা করবে?

আমরা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোয় দেখি জনগণের ন্যায্য ও সাধারণ অধিকার পেতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে ঘুষ দিতে হয়; কারণ জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি, অধিকার দেওয়ার কথা চিন্তাও করছি না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় সঠিক শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে ভবিষ্যতে সুনাগরিক তৈরি করার ক্ষেত্রে আমরা কী দেখি? জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের ইচ্ছামতো নিয়োগ দিয়ে থাকেন, সঠিক শিক্ষককে নিয়োগ না দিয়ে অর্থের বিনিময়ে অযোগ্য লোকদের নিয়োগ দেওয়া হয়। ফলে ধস নামে শিক্ষার মানে।

এ জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এই বিষয়টিতে নাকি জনপ্রতিনিধিরা খুব অখুশি। তারা এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ যাতে না হয়, সে জন্য অনেকেই প্রত্যক্ষ ও প্রচ্ছন্ন বিরোধিতা করে আসছেন। এদিকে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) ভুয়া ওয়েবসাইট খুলে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছে একটি চক্র। যারা শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে আসছেন তাদের ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে সনদ দিয়ে যাচ্ছে।

এই বিয়ষটি নিয়ে অর্থাৎ জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার তৈরির কারখানাগুলো যাতে স্বচ্ছ থাকতে পারে, সে জন্য আমাদের আগামী সংসদে যারা প্রতিনিধিত্ব করবেন, তারা কি ভাবছেন? প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় বিদ্যমান যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলো সমাধানের জন্য তারা কী করবেন; সে বিষয়ে সব ভোটার তথা জনগণ তাদের মুখ থেকে কিছুই স্পষ্ট শুনছে না। অন্য অনেক বিষয় নিয়ে কথা হয়; কিন্তু এই বিষয়টি অস্পষ্টই থেকে যাচ্ছে।

অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ছাত্রীদের জন্য পৃথক টয়লেট নেই। থাকলেও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। অনেক স্কুলে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা আছে; কিন্তু এক গ্লাসে সবাইকে পানি পান করতে হয়। যদিও প্রাইমারি শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প-৩-এর লক্ষ্য ছিল, ২০১৭ সালের জুন মাসের মধ্যে দেশের ৯৫ শতাংশ স্কুলে মেয়েদের জন্য পৃথক পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; কিন্তু করা হয়নি।

মাত্র ৩২ দশমিক ৬ শতাংশ স্কুলে ছাত্রীদের জন্য পৃথক টয়লেট ব্যবস্থা রয়েছে। অর্থাৎ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রায় ৬৭ শতাংশেই ছাত্রীদের পৃথক পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা নেই। সরকারি ১৮ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি শৌচাগারও নেই। একটি টয়লেট বিদ্যমান থাকা স্কুলগুলোয় ছেলেমেয়েরা যৌথভাবে তা ব্যবহার করে থাকে। অথচ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জেন্ডারবান্ধব স্যানিটেশন নিশ্চিত করা উচিত। কমন টয়লেটের পাশে ছাত্রীদের আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

বাংলাদেশে প্রতি ১৮৭ জন শিক্ষার্থীর জন্য টয়লেট রয়েছে একটি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৪৫ শতাংশ টয়লেট বন্ধ থাকে। চালু থাকা টয়লেটের দুই-তৃতীয়াংশের ভেতরে বা কাছাকাছি পানি ও হাত ধোয়ার সাবানের ব্যবস্থা থাকে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। ঋতুকালীন অনেক মেয়েকে স্কুলে অনুপস্থিত দেখা যায়।

শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রেখে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নত করতে ২০১৫ সালে একটি পরিপত্র জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাতে বলা হয়, টয়লেট পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়টি প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির নজরদারিতে আনতে হবে। ওই কমিটি এ খাতের জন্য পৃথক একটি সংরক্ষিত তহবিলের ব্যবস্থা করবে। টয়লেটগুলো নিয়মিত পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য প্রয়োজনীয় লোকবলও নিয়োগ করবে। সংরক্ষিত তহবিল থেকে এ ব্যয় মেটানো যাবে। পরিপত্রে ছাত্রীদের জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা, টয়লেটে ঢাকনাযুক্ত প্লাস্টিকের পাত্র রাখা, ঋতুকালীন বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য একজন শিক্ষিকাকে দায়িত্ব দেওয়া, স্যানিটারি ন্যাপকিন রাখার ব্যবস্থা রাখার কথা ছিল। কিন্তু হয়নি কিছুই।

স্কুলের টয়লেট বা মানসম্পন্ন স্যানিটেশন না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী, বিশেষ করে মেয়েরা পানি না খেয়ে থাকে। এতে করে তারা ইউরিন ইনফেকশনে আক্রান্ত হয়। ফলে জ্বর, পেটে ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা তাদের লেগেই থাকে। অনেকের শরীরে পানিশূন্যতাও দেখা দেয়। মেয়েদের প্রাকৃতিক সমস্যা হলো ঋতুকালীন সমস্যা। অনেকের জীবনে প্রথম মাসিক হয় স্কুলে। কিন্তু স্কুলগুলোয় এ সময় প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় তারা বিপাকে পড়ে।

তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারায় এসব ছাত্রী লোকাল ইনফেকশনে ভোগে। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, যথেষ্ট গোপনীয়তা এবং মেয়েদের জন্য আলাদা মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা উপযোগী টয়লেট- এ বিষয়গুলো শিক্ষা গ্রহণের পরিবেশ নিশ্চিত করে। তাই দেশের প্রত্যেক স্কুল কর্তৃপক্ষ, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিসহ সবার অংশগ্রহণে প্রতিটি পর্যায়ে এ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন; কিন্তু আমাদের প্রতিনিধিরা এসব বিষয়ে চিন্তা করছেন কি?   - সমকাল