মনোনয়ন নিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি

প্রকাশের সময় : 2018-12-06 14:47:53 | প্রকাশক : Admin �মনোনয়ন নিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি

আজকাল সবকিছুতেই রেকর্ড হয়। আবার রেকর্ড গড়ে ইতিহাসে নাম লেখাতে কতই না চেষ্টা-কসরত চলে দেশে-বিদেশে। কিন্তু নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে ইতিহাস বা রেকর্ড সৃষ্টি বাংলাদেশে এই প্রথম। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর এবারই প্রথম ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দীর্ঘদিন মানি না, মানব না বললেও সব শঙ্কা-উদ্বেগ-অনিশ্চয়তা কাটিয়ে সব রাজনৈতিক দলই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন মেনে নিয়েই নেমে পড়েছে নির্বাচনীযুদ্ধে। সেই সঙ্গে গড়েছে দেশের ইতিহাসে দলগুলোর মনোনয়নপত্র বিক্রির নতুন রেকর্ড।

সঠিক কোন পরিসংখ্যান না থাকলেও রাজনৈতিক বিশ্লে−ষক ও ইতিহাসবিদদের মতে, বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে মাত্র তিনশ’ আসনের বিপরীতে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা প্রায় ১২ হাজারের কাছাকাছি যাওয়ার ঘটনা দেশের ইতিহাসে অবশ্যই রেকর্ড। তবে অন্যান্য দেশের পরিসংখ্যান না থাকায় নির্বাচনের ক্ষেত্রে এটিই বিশ্ব রেকর্ড কিনা  তা বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে দেশের স্বাধীনতার ৪৭ বছরের ইতিহাসে মনোনয়ন বিক্রিতে রেকর্ড গড়েছে রাজনৈতিক দলগুলো।

অঙ্কের হিসাবে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রতিটি আসনে প্রায় ৪০ জন। স্বাধীনতার পর অনুষ্ঠিত গত ১০টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এত মনোনয়নপ্রত্যাশীর ছড়াছড়ি অতীতে কখনও দেখা যায়নি। নির্বাচনে দাঁড়ানো গণতান্ত্রিক অধিকার বলা হলেও এমন রেকর্ডসংখ্যক মনোনয়নপ্রত্যাশী হওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ও দুর্বলতারই বহিঃপ্রকাশ বলেও মনে করছেন রাজনীতির সংশ্লিষ্টরা।

সব দলের অংশগ্রহণে একাদশ জাতীয় নির্বাচন হবে কিনা, মাত্র ক’দিন আগেও এ নিয়ে ছিল নানা শঙ্কা, প্রশ্ন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপের পর উড়ে গেছে সব শঙ্কা। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলই এখন নির্বাচনমুখী। সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মোট মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা ৪ হাজার ২৩ জন। অর্থাৎ প্রতি আসনে দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা ১৩ জন।  হিসাব অনুযায়ী, দশম জাতীয় নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপিতে তিনশ’ আসনের বিপরীতে মনোনয়নসংগ্রহ করেছেন ৪ হাজার ৫৮০। এ দলটির প্রতি আসনে প্রার্থীর সংখ্যা ১৫ জন। বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও মনোনয়ন বিক্রিতে রেকর্ড করেছে। দলটি তিনশ’ আসনের বিপরীতে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে ২ হাজার ৮৬৫টি। এ দলটিরও প্রতি আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রায় ১০ জন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির বাইরেও জোট- মহাজোট- ঐক্যফ্রন্ট-যুক্তফ্রন্টসহ নানা নামে নির্বাচনে অংশ নেয়া অন্যান্য দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যাও অবাক করার মতো। হাতেগোনা ১০-১৫ আসনেও বিজয়ী হওয়ার মতো যোগ্য প্রার্থী না থাকলেও এসব দল মনোনয়ন বিক্রি করেছে শত শত। জানা গেছে, বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে আসা ঐক্যফ্রন্টের অন্য দলগুলোতে মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা দেড় শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে আসা যুক্তফ্রন্ট, ইসলামী ঐক্যজোটসহ অন্য দলগুলোও দলীয়ভাবে এক থেকে দেড়শ’ মনোনয়ন প্রত্যাশীর কাছে মনোনয়ন ফরম বিতরণ করেছে বলে জানা গেছে। এছাড়া বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, সাম্যবাদী দল, কমিউনিস্ট কেন্দ্রসহ বাম রাজনৈতিক দলগুলো এবং জাতীয় পার্টি জেপিসহ অন্যান্য দল মিলিয়ে প্রায় শতাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছে বলে তাদের দাবি।

সব রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রির হিসাবগুলো মিলিয়ে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি শুধু বড় এই তিন রাজনৈতিক দলেরই মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা ১১ হাজার ৪৬৭ জন। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ থেকে এগিয়ে রয়েছে আগে নির্বাচন বর্জনকারী দল বিএনপি। আওয়ামী লীগ ৪ হাজার ২৩ জন মনোনয়ন প্রত্যাশীর বিপরীতে বিএনপি মনোনয়ন বিক্রি করেছে ৪ হাজার ৫৮০টি। এছাড়া ঐক্যফ্রন্ট, যুক্তফ্রন্ট, বাম গণতান্ত্রিক জোট, ১৪ দল, জাতীয় পার্টি জেপি, ইসলামী দলগুলো এবং নিবন্ধন হারানো জামায়াতসহ নির্বাচনে আসা সব রাজনৈতিক দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যাও কম-বেশি ৫শ’র কাছাকাছি। সব রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রির হিসাব যোগ করলে তা প্রায় ১২ হাজারের কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছায়। স্বাধীনতার ৪৭ বছরের ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা বলেই মনে করা হচ্ছে। উত্তম চক্রবর্তী/শরীফুল ইসলাম