দুর্দান্ত এক জাহাজ; ভ্রমণের হাতছানি

প্রকাশের সময় : 2018-11-21 13:52:02 | প্রকাশক : Admin �দুর্দান্ত এক জাহাজ; ভ্রমণের হাতছানি

সিমেক ডেস্কঃ আমরা যেখানে বসে আছি সেটা একটা দেশের একটা বিভাগের একটা কোণামাত্র। সেই দেশ আছে কোনো এক মহাদেশে, মহাদেশ আছে এই পৃথিবীতে যা একটি গ্যালাক্সির অন্তর্ভুক্ত। যেটা আবার এই মহাবিশ্বের একটি কোণা মাত্র। যেটা প্রতি সেকেন্ডে প্রসারিত হচ্ছে অনন্তকাল ধরে এবং আমাদের অনেক কিছুই রয়ে যাচ্ছে সেখানে অদেখা, অস্পর্শকৃত। জ্ঞানীরা বলেন, “বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ পৃথিবীর এক কোণায় জন্মগ্রহণ করে, সেই একই কোণায় সারাজীবন কাটিয়ে সেখানেই ফুরিয়ে যায় জীবনের শেষ কয়েকটি দিন”।

নিজেকে যদি সে গন্ডির বাইরে আনতে চান, সারা বিশ্বের ৭টি মহাদেশেই যদি নিজের পদধূলি দেয়ার সৌভাগ্য অর্জন করতে চান তবে আধুনিক বিশ্ব আপনার জন্য রেখেছে তেমনই এক সুযোগ। সেই সুবর্ণ সুযোগটির নাম দেয়া হয়েছে “সিলভার সী ওয়ার্ল্ড ক্রুজ”। নাম শুনেই বুঝে গিয়েছেন এটি মূলত একটি জাহাজ কোম্পানি বিশেষ, যার জাহাজ সারা পৃথিবীতে চক্কর লাগাবে ১৪০ দিনে আর নোঙর ফেলবে ৭টি মহাদেশের ৩২টি দেশের ৬২টি বন্দরে। কি মাথা ঘুরছে? ঘোরারই কথা, অসামান্য এই বিশাল ট্রিপের অভিজ্ঞতা কতটা রোমঞ্চকর হবে একবার ভেবে দেখুন তো?

৪ মাসের এই বিশাল ট্যুরের কথা শুনেই হয়তো খরচের কথা মাথায় এসে পড়েছে সবার। তবে ঠিকই ধরেছেন, নেহাৎ কম খরচ হবে না এই বিশাল ট্রিপে। জাহাজখানা ২০২০ সালে এর প্রথম যাত্রা শুরু করবে, তাই যাওয়ার ইচ্ছে থাকলে টাকা জমানো শুরু করুন আজকে থেকেই। তবে তার আগে চলুন দেখে নেয়া যাক ঠিক কোনদিক দিয়ে কোথায় কোথায় যাবে এই জাহাজটি আর কেমন হবে এর সুযোগ সুবিধা। ২০২০ সালে যাত্রা শুরু করতে যাওয়া এই জাহাজটিকে ডাকা হবে “সিলভার হুইসপার” নামে। জাহাজটি ধারণ করতে পারবে ৩৮২ জন যাত্রী আর ৩০২ জন ক্রুকে। জাহাজের ভেতর থাকবে চিরায়ত দামী সব অভিনব আয়োজন। যাদের মধ্যে বিশ্বমানের রেস্তোরাঁ, ককটেইল বার, লাইব্রেরি, থিয়েটার, সুইমিংপুল, স্পা ইত্যাদি অন্যতম। একবার চোখ বন্ধ করে কল্পনাশক্তিকে কাজে লাগান, যা যা চিন্তায় আসে তার সবই আছে জাহাজটিতে। টাইটানিক জাহাজের অভ্যন্তর দেখে থাকলে কল্পনা করাটা সহজ হবে আপনার জন্য।

এখন আসা যাক কোথা থেকে যাত্রা শুরু করবে জাহাজটি এবং কোথায় কোথায় নোঙর করবে। আমেরিকার ফ্লোরিডার ফোর্ট লওডারডেল থেকে আমস্টারডামের উদ্দেশ্যে শুরু হবে জাহাজের প্রথম যাত্রা। জাহাজটি তার এই ১৪০ দিনের বিশাল যাত্রায় আপনাকে সুযোগ দেবে বিশ্বের সকল বাঘা বাঘা সাগরে নিজেকে আবিষ্কার করার আর সেই সাগরগুলোর নীল পানিতে গা ভেজানোর। যে সাগরগুলোর নাম আমরা সচেতন বা অবচেতন মনে আজ অবধি শুনে এসেছি তার সব কয়টি দিয়েই যাবে জাহাজখানি। দক্ষিণ আমেরিকা, এন্টার্কটিকা মহাদেশ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ আর আমাদের এশিয়ার প্রায় পুরোটাই ঘুরিয়ে আনবে এই জাহাজখানি।

জাহাজটিতে মোট সাত রকমের রুমের ব্যবস্থা আছে যার পুরো ১৪০ দিনের ভ্রমণখরচ শুরু হয় ৬২,০০০ ডলার থেকে ২,৪০,০০০ ডলার পর্যন্ত। বাংলাদেশি টাকায় হিসেব করলে এই ১৪০ দিনের জাহাজ ভাড়ার অংক গড়ায় প্রায় ৫৩ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে ২ কোটি পর্যন্ত। আপনার চোখ যদি আমার মতো কপালে উঠে যায় তাহলেও চিন্তা করার বিষয় টাকা না, সময়। চার মাসের এত লম্বা ছুটি এত টাকা আয়কারী বাংলাদেশি কেউ পাবে বলে মনে হয় না। জাহাজের সাত রকম থাকার ব্যবস্থার ছোট করে বিবরণ তুলে ধরছি।

নামেই পরিচয় পাওয়া যায় এই রুম ব্যবস্থার। বেশ বড়সড় একটা স্টাইলিশ, মর্যাদা সম্পন্ন উচ্চশ্রেণীর এই এপার্টমেন্ট জাতীয় স্যুটে এক বেডরুম অথবা দুই বেডরুমের ব্যবস্থা আছে। আপনার ইচ্ছেমত রুম সংখ্যা বেছে নেয়ার সুযোগ থাকছে। যাদের একটু আরাম আয়েশ আর বড়সড় জায়গা দরকার তাদের জন্য বিশেষভাবে তৈরী হয় স্যুটটি যার ভাড়া পড়বে প্রায় ২ কোটির একটু বেশি।

সংযুক্ত বারান্দাসহ একদম বাড়ির মতো আয়েশ করে নিরিবিলিতে খাওয়া দাওয়া আর ১৪০ দিনের এই ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে সুন্দর করে উপভোগ করতে এই স্যুটে আছে একটি বা দুটি বেডরুমের ব্যবস্থা। রাজকীয় রুমের স্বাদ নিতে স্যুটটি অনেক উপযোগী। আরাম আয়েশ আর বিনোদনের সব ব্যবস্থা সহ এই স্যুটটিতে আছে সংযুক্ত বারান্দা যার ধারে দাঁড়িয়ে দেখা যাবে ৭টি মহাদেশের সব কয়টি।

বারান্দাকে প্রাধান্য রেখে বানানো হয়েছে প্রতিটি স্যুটের রুম ব্যবস্থা। ঘরের মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত কাঁচের দরজা দেয়া বারান্দার অস্বাভাবিক সুন্দর ব্যবস্থা এই জাহাজ কোম্পানির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বিশেষ। মোট চারটি বারান্দার সমন্বয়ে বানানো এই স্যুটের মোট ক্ষেত্রফল ৩৪৫ বর্গফুট। বারান্দা ১ এবং ২ এ যেখানে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে সেখানে ৩ নং এবং ৪ নং বারান্দা থেকে দেখা যাবে সমুদ্রের দুর্দান্ত সব দৃশ্য।

ঘুরতে টাকা লাগে না কথাটি আংশিক সত্য এবং আংশিক মিথ্যা। টাকা যে নেই বাংলাদেশীদের ব্যাপারটা তেমন নয়, আছে ইচ্ছাশক্তির অভাব। এত টাকা খরচ করে আমরা চার মাসের বিশ্ব ভ্রমণে যেতে অভ্যস্ত নই। তবে স্বপ্ন দেখায় তো আর কোনো বাধা নেই, স্বপ্ন দেখতে দোষ কী? বলা হয় যে স্বপ্ন পূরণ করতে হবে; সেটাকে আগে বিশ্বাস করতে হবে, আগে নিজের চোখে দেখতে হবে সে স্বপ্ন। তাহলে একদিন না একদিন স্বপ্ন পূরণ হতে বাধ্য। তবে এই জাহাজের স্বপ্ন এতক্ষণে যাদের চোখে লেগে গেছে তাদের একটু তাড়াতাড়িই সবকিছু গুছাতে হবে, খুব সম্ভবত এই বছরেই শেষ হয়ে যাবে আগে থেকে রুম বুকিং এর সুবিধা। ভ্রমণ হোক সুন্দর এবং উচ্ছল।