প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে মডেল জি-২০’র অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে

প্রকাশের সময় : 2020-01-01 12:34:01 | প্রকাশক : Administration প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে মডেল জি-২০’র অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে

সিমেক ডেস্কঃ স্বাধীনতার ৪৮ বছরে মোট দেশজ উৎপাদন জিডিপিতে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশের শীর্ষে অবস্থান করছে। অভ্যন্তরীণ ভোগ চাহিদা, সরকারী ব্যয়, রেমিটেন্স, রফতানি ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির ফলে এই অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, প্রতিনিয়ত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ঋণের বিপরীতে উচ্চসুদ, রাজস্ব আদায়, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের মতো নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর গত দশ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। রূপকল্প-২১ সামনে রেখে আগামী দুই বছরের মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ঘরে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিক থেকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ‘মডেল’ বলে মত প্রকাশ করেছেন এডিবি কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ। জিডিপি প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিক এই অর্জনে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী জি-২০’র সদস্য রাষ্ট্র হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

গত কয়েক বছর ধরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে রেকর্ড অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ৬ অঙ্কের বৃত্ত ভেঙ্গে জিডিপি প্রবৃদ্ধি এখন ৮ এর ঘরে অবস্থান করছে। রূপকল্প-২১ সামনে রেখে এই জিডিপি দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে বাংলাদেশের সামনে। এলক্ষ্যে রফতানি বাড়াতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এছাড়া উৎপাদন বাড়াতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আসছে দেশে। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার।

জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে শীর্ষে অবস্থান করছে। বেড়ে চলছে মাথাপিছু আয়। স্বল্পোন্নত থেকে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ। তিনি বলেন, জনসংখ্যা, গড় আয়ু, শিশুমৃত্যুর হার, মেয়েদের স্কুলে পড়ার হার, সক্ষম দম্পতিদের জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণের হারসহ সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ সমপর্যায়ের উন্নয়নশীল অন্যান্য দেশ, এমনকি প্রতিবেশী ভারতকেও পেছনে ফেলতে সমর্থ হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর চূড়ান্ত হিসেব অনুযায়ী গত (২০১৮-১৯) অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। গত বছর প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। বিবিএসের প্রাথমিক হিসেবে প্রবৃদ্ধির এ হার ছিলো ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। এছাড়া দেশের মানুষের বার্ষিক মাথাপিছু আয় এক হাজার ৯০৯ ডলার যা টাকার সমপরিমাণে ১ লাখ ৬০ হাজার ৪৪০ টাকা। এই অর্থবছরের ৮ মাসে মাথাপিছু আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছিল ১ হাজার ৯০৯ ডলার। ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমায় মাথাপিছু আয় ৩৮০ টাকা বেড়েছে। মাথাপিছু আয় ডলারে সমপরিমাণ হলেও টাকার অংকে বেড়েছে। গতবছরে এই অংক ছিল ১ হাজার ৭৫১ ডলার।

যে পাকিস্তানের হাত থেকে স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ, সেই পাকিস্তানীরা আজ বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে দেখে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা। তিনি বলেন, ২০০৯ থেকে শুরু করে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এ দেশের সবচেয়ে সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের দশ বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সারা বিশ্বে সবার ওপরে। এ সময় বাংলাদেশের জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮৮ শতাংশ, যা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোর চেয়েও বেশি।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনমিকস এ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৩২ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের বড় ২৫ অর্থনীতির দেশের একটি হবে। তখন বাংলাদেশ হবে ২৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। বর্তমানে অবস্থান ৪১তম। আর ২০৩৩ সালে পেছনে থাকবে মালয়েশিয়া, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশ। আগামী ১৫ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি গড়ে ৭ শতাংশ থাকবে।

এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, অনেক সাফল্যের পথ বেয়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধির এই অর্জন এসেছে। দুই অঙ্কের ঘরে জিডিপি হলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়বে। শীর্ষ ধনীদেশগুলোর কাতারে থাকবে এদেশের নাম। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের লক্ষ্য, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করা। তবে দেশের অগ্রযাত্রার যে গতি পরিলক্ষিত হচ্ছে, তাতে আশা করা যায়, এর পূর্বেই আমরা সে আশা পূর্ণ করতে পারব। গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের মতো ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারেনি কোন দেশ। - সূত্রঃ জনকণ্ঠ