আকবর ‘দ্য গ্রেট’ কেন?

প্রকাশের সময় : 2018-05-24 22:41:28 | প্রকাশক : Admin �আকবর ‘দ্য গ্রেট’ কেন?

সিমেক ডেস্কঃ জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর ভারতবর্ষের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক। পৃথিবীর ইতিহাসে মহান শাসকদের অন্যতম মহামতি আকবর নামেও পরিচিত। তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট। পিতা সম্রাট হুমায়ুনের মৃত্যুর পর ১৫৫৬ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে আকবর ভারতের শাসনভার গ্রহণ করেন। বৈরাম খানের তত্ত্বাবধানে তিনি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার সাম্রাজ্য বিস্তার করতে থাকেন। ১৫৬০ সালে বৈরাম খাঁকে সরিয়ে আকবর নিজে সকল ক্ষমতা দখল করেন।

কিন্তু আকবর ভারতবর্ষ ও আফগানিস্তানে তার সাম্রাজ্য বিস্তার চালিয়ে যান। ১৬০৫ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় সমস্ত উত্তর ভারত তার সাম্রাজ্যের অধীনে চলে আসে। আকবরের মৃত্যুর পর তার পুত্র সম্রাট জাহাঙ্গীর ভারতবর্ষের শাসনভার গ্রহণ করেন। সম্রাট আকবর, আকবর দ্য গ্রেট। সমগ্র ভারতবর্ষের একচ্ছত্র অধিপতি আকবর দ্য গ্রেট ছিলেন নিরক্ষর। লিখতে পড়তে জানতেন না তিনি, তবে অসম্ভব তীক্ষ্ম স্মৃতিশক্তি ছিল তার। একবার যা দেখতেন বা শুনতেন, তাই মনে রাখতে পারতেন। কেউ কেউ বলেন মাত্র ১৩ বছরেই নিজের কাঁধে সমগ্র শাসনের ভার চলে আসার চাপে কখনো পড়াশোনা করার সুযোগ হয় নি আকবরের। কেউ কেউ বলেন আকবরের ডাইস্লেক্সিয়া নামক একটি রোগ ছিল। এই কারণে পড়তে গেলে কখনোই তিনি অক্ষরগুলো ঠাহর করতে পারতেন না, যে কারণে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় নি তার। তবে নিজে পড়াশোনা না করলেও আকবর শিক্ষিত ও জ্ঞানী গুণীদের বেশ সমাদর করতেন। তার সভাকে অলংকৃত করেছিলেন ইতিহাস বিখ্যাত নবরত্ন।

শিকার করতে সম্রাট আকবর খুব পছন্দ করতেন। তিনি যখন শিকারে যেতেন, সাথে খুবই অল্প লোক রাখতেন। কখনো কখনো একা একাই শিকারে চলে যেতেন। কথিত আছে, ১৯ বছর বয়সে আকবর একটি সিংহী শিকার করেছিলেন, তাও শুধু একটি তলোয়ারের সাহায্যে। বাঘ, সিংহ, চিতা, বন্য বাইসন, এমনকি হাতিও শিকার করতেন আকবর। এসব শিকার করতে গিয়েই একবার মারাত্মকভাবে আহত হন তিনি। তবে স্রষ্টার অসীম কৃপায় এবং কিছুটা অলৌকিকভাবেই সেরে ওঠেন তিনি। এই কারণে অনেকেই ভেবে থাকেন যে ৬৩ বছর বয়সে আকবরের মৃত্যুবরণ করাটা কিছুটা অদ্ভুত।

আকবরের শাসনামলে গড়ে ওঠা স্থাপত্যগুলো দেখলেই মনে হবে এটি যে স্বয়ং আকবরকেই নির্দেশ করছে। তার রাজধানী ফতেহপুর সিক্রি ১৯৮৬ সালে পৃথিবীর দর্শনীয় স্থানগুলোর তালিকায় জায়গা পায় এবং রানী যোধা বাই, তানসেন কিংবা বীরবলের জন্য তৈরি বাসভবনগুলোও দেখতে অতুলনীয়। অনেকেই বলেন আকবরের স্থাপত্যের মাঝে কিছুটা নিজ ধর্মের প্রতি বেশিমাত্রায় টান প্রকাশ পায় কিন্তু হিন্দু কিংবা মুসলমান, দুই ধর্মের নিকট হতেই এই স্থাপত্যগুলোর উপাদান সংগ্রহ করা হয়েছে।

কেবলমাত্র শৌর্য-বীর্য বা অসীম সাহসই একজন শাসককে মহান করে তোলে না। এরজন্য চাই কঠোর অনুশাসন ও নিয়মকে মান্য করা। আকবর কঠোরভাবেই তা মেনে চলতেন। দিনে ঘুমুতেন মাত্র সারে চাড় ঘণ্টা। রাতে তিন ঘন্টা ও দূপুরে দেড় ঘন্টা ঘুমুনো আকবর মনে করতেন মূল্যবান কিন্তু সংক্ষিপ্ত এই জীবনটিকে কেবলমাত্র ঘুমিয়ে নষ্ট করলে চলবে না। মধ্যবয়সে এসে শাকাহারী হয়ে যান আকবর। মাছ মাংস খাওয়া ছেড়ে দেন। হাঁটতে পছন্দ করতেন তিনি। মথুরার শিকার ভূমি থেকে একবার বিশাল লোকলস্কর নিয়ে পায়ে হেঁটে আগ্রা রওনা দিয়েছিলেন তিনি। যাত্রাপথ ছিল প্রায় ষাট কিলোমিটারের মতো। এতোটাই দ্রুত হেঁটেছিলেন যে শেষপর্যন্ত তার সাথে মাত্র দুজন লোক তাল মিলিয়ে চলতে পেরেছিল!

নিজের খেয়াল বা হারেমের নারী, সবদিকেই আকবরের ছিল সমান ঝোঁক। রাজ্য শাসন করবার সময় তার বেশ কিছু সিদ্ধান্ত মানুষের উপকারে এসেছে। জিজিয়া কর সরিয়ে দেয়া, হিন্দু ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করা, হজ্বের সময় যাতে মুসলমানদের কষ্ট কম হয়, সেজন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা, দ্বীন ই এলাহী প্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি কাজ আকবরকে করেছে জনপ্রিয়। তবে প্রদীপের নিচে যেমন অন্ধকার থাকে, ঠিক তেমনি আকবরের মাঝেও যে কোন দোষ বা কালিমা ছিল না, তা কিন্তু মোটেই বলা যাবে না। তবুও, ইতিহাসের পাতায় তিনি ‘আকবর দ্য গ্রেট’ এক মহান শাসক। -সূত্রঃ ডেইলি বাংলাদেশ