উল্টা পাল্টা সিক্স এন্ড নাইন!!

উল্টা পাল্টা সিক্স এন্ড নাইন!!

সরদার মোঃ শাহীন

 

আমার এক দুষ্ট বন্ধুর গল্প। সব কিছুতেই তার দুষ্টামি। ধরুন, খুব সিরিয়াস ইস্যু নিয়ে কথা হচ্ছে। সে চুপচাপ শুনবে প্রথমে। কিচ্ছু বলবে না। বাকীরা কথা বলছে, মাথা খাটাচ্ছে কিভাবে পরিস্থিতি সামাল দেবে। কিন্তু দুষ্ট বন্ধুটি নির্বিকার। পরিস্থিতি সামাল দেয়া নিয়ে তার মাথা ব্যাথা নেই। এসবে তার কোন ভূমিকাও নেই। কিন্তু এক সময় কুট করে এমন কিছু বলবে, সবাই হেসে কুটি কুটি।

কথা হচ্ছে বাঙালি জাতির উল্টা পাল্টা চলা নিয়ে। যদিও ইস্যুটা ততটা সিরিয়াস ইস্যু নয় অনেকের কাছেই। কিন্তু আজ বন্ধু আমার সিরিয়াস ভাবেই কথা শুরু করলো। বললো, বাঙালি উল্টা পাল্টা চলবে না তো কারা চলবে? বাঙালির মন তথা হৃদয় হলো মেড ইন চায়নীজ। কখনো ওয়ার্ক করে, কখনো করে না। বলে একটু দম নিল। দম নেয়া শেষে আবার কিছু বলতে যাবে। পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়লাম আমি। বিষয়টা বুঝিয়ে বলতে বললাম।

বন্ধুটি বললো, ব্যাপারটি খুব সোজা। কোন কিছু নিয়ে বাঙালির মন বা বুক যখন হাশপাশ করে, তখন নিশ্চয়ই বুকটা জাপান, জাপান করে না। কোরিয়া, কোরিয়াও করে না। বুকটা অলওয়েজ চিন চিন করে। মেড ইন চায়না বলেই তো চিন চিন করে। মেড ইন চায়না জিনিস উল্টা পাল্টা ওয়ার্ক করবে না, তো জাপান ব্রান্ডের মত করবে? হৃদয় আমাদের চায়নীজ বলেই বাঙালি চলে উল্টো পথে, আর উল্টো পথেই হাঁটে।

সবাই হো হো শুরু করে দিল। বন্ধু আমার মজা করে বললেও একেবারে মন্দ বলেনি। আসলেই বাংলাদেশ আর উল্টা পাল্টা শব্দ দুটি খুব কাছাকাছি অবস্থান করে সব সময়। যেখানে যা থাকার কথা, তা থাকেনা; থাকে ঠিক তার উল্টোটি। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে বিদ্যুতের সুইচ উপরে উঠালে অন হয়; কিন্তু বাংলাদেশে হয় অফ। বিষয়টি কি ভেবে দেখার মত বিষয় নয়?

বিদেশ থেকে এই দেশে আসার পর প্রত্যেক প্রবাসী বাঙালির এই সমস্যায় পড়তে হয়। শুধু কি তাই? প্রায় সব দেশে বিদ্যুতের ভোল্টেজ ১১০ আর আমাদের দেশে ২২০। কেন এমন হয়? আমরা বিদেশ থেকে ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী কিনে আনি ১১০ ভোল্টেজের। কিন্তু দেশে এনে চালাতে পারি না। চালাবার জন্য আলাদা কনভার্টার কিনতে হয়।

এ নিয়ে বিদেশীরা নানা হাস্যকর প্রশ্ন করে; কিন্তু উত্তর দিতে পারি না। খেয়াল করে থাকবেন কোন জিনিস কম পরিমাণে কিনলে বেশি দাম আর বেশি পরিমাণে কিনলে কিছুটা কম দামে কেনা যায় সব দেশে। কিন্তু আমাদের দেশে বিদ্যুত, গ্যাস আর পানি বেশি ব্যবহার করলে দাম প্রায় তিনগুন বেশি দিতে হয়। কি অদ্ভুত ব্যাপার! 

আরেকটি অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করুন। উন্নত দেশের মানুষেরা খাবার রান্না করে ৩০ মিনিটে আর সেই খাবার খেতে সময় নেয় তিন ঘন্টা। আস্তে আস্তে সময় নিয়ে খাবারটি খায় যেন হজমে সমস্যা না হয়; যেন পুরো খাবারটি শরীরের কাজে লাগে। আর আমাদের দেশে মা বোনেরা রান্না করতে সময় নেয় ৩ ঘন্টা। কিন্তু আমরা সবাই সেই খাবার ৩০ মিনিটে সাবার করে ফেলি। কী অদ্ভুত ব্যাপার! উল্টা পাল্টা আর কাকে বলে!

হয়ত আমার এসব ভাবনা দেখে কোন কোন পাঠক বরং আমার মাথাটিই উল্টা পাল্টা হয়ে গেছে বলে ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন। তা ভাবুন। কিন্ত অনুরোধ থাকবে নিজের মাথাটি অন্তত ঠিক রাখুন এবং ভেবে চিন্তে ঠিক কাজটিই করুন। নিজের শরীরটার জন্যেই ঠিক কাজটি করা দরকার।

সারারাত না খেয়ে থাকার পরে আমাদের দরকার সকালের নাস্তায় সবচেয়ে বেশি করে খাবার খেয়ে পেটটি পুরোপুরি ভরে রাখা। ব্রেকফাস্ট মানে হলো ফাস্টিং কে ব্রেক করা, অর্থাৎ ইফতার করা। আমরা ইফতারে কী করি? ইচ্ছে মত খাই না? তাহলে সকালের নাস্তা নিয়ে এত উল্টা পাল্টা কেন?

নিয়ম হলো দুপুরে পারতপক্ষে তেমন কিছু না খাওয়া; বেশি খেলে কাজকর্ম করা যায় না; খাবার শেষে ঘুম আসে আর শরীর বেশি ভারী হয়ে যায়। শরীর সুস্থ রাখার জন্যে দুপুরের ঘুম একেবারেই নিষিদ্ধ থাকা দরকার। ক....

 

পূর্বে প্রকাশিত