রিকশাচালকের জীবনবোধ!

প্রকাশের সময় : 2018-11-21 13:28:50 | প্রকাশক : Admin

বিভুরঞ্জন সরকারঃ মালিবাগ মোড় থেকে পান্থপথে অফিসে আসি রিকশায়। ভাড়া আশি টাকার কম নয়, একশ টাকার বেশি নয়। রিকশায় ওঠার আগেই আমি ভাড়া ঠিক করে নেই। কোনো কোনো রিকশা চালক যাত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। কোনো চালক প্রশ্ন করলে উত্তর দেন, কোনো চালক একেবারে চুপচাপ চালিয়ে যান। ৫ নভেম্বর একজন রিকশাচালকের কাছে জানতে চাই পান্থপথ যাবেন কিনা।

তিনি বলেন, পান্থপথ আবার কোথায়?

আমি বলি, স্কয়ার হাসপাতালের কাছে।

রিকশাচালক বলেন, ওটা তো পান্তাপথ, পান্থ নয়।

আমি ভাড়া জিজ্ঞেস করলে তিনি একবারেই আশি টাকা চাইলেন। আমি উঠে বসলাম। চালক কথা শুরু করেন। তার পান্তাপথের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। বলেন, ধানমন্ডিতে আগে ধান চাষ হতো। কলাবাগানে ছিল কলার বাগান। এই দুই জায়গায় যারা কাজ করতেন, তারা পাশের একটি জায়গায় বসে পান্তাভাত খেতেন। ওই জায়গাটাই এখন পান্থপথ হয়েছে। পান্তা থেকে পান্থ। তবে ভদ্রলোকেরা পান্তাপথ না বলে বলে পান্থপথ।

পান্থপথের নামকরণের এমন ব্যাখ্যা একজন রিকশাচালকের মুখে শুনে আমি তার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠি। তার নাম আমজাদ হোসেন। বাড়ি ভোলা। বলেই গর্ব করে বলেন, আমি তোফায়েল আহমেদের এলাকার পোলা। আমরা আওয়ামী লীগ করি।

আমজাদ ত্রিশ বছর ধরে রিকশা চালান। তার আগে চার বছর নৈশ প্রহরীর কাজও করেছেন। ঘরে স্ত্রী আছেন। ঘরভাড়া জোগাড়ের দায়িত্ব স্ত্রীর। তিনি মানুষের ‘বাসাবাড়িতে কাজ’ করে যা উপার্জন করেন তাতে ঘরভাড়া হয়ে যায়। খাওয়া খরচ আমজাদ হোসেন উপার্জন করেন রিকশা চালিয়ে। তাদের সাত সন্তান। চার পুত্র, তিন কন্যা। সবাইকে ‘আল্লাহর পথে’ দিয়েছেন। অর্থাৎ তারা মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। কোনো টাকা-পয়সা লাগে না। আমি বললাম, এতোগুলো সন্তান নিলেন কেন? কম ছেলেমেয়ে থাকলে ভালো হতো না?

তার জবাব, ‘আল্লাহ দিছে। অসুবিধা কি? মুখ যিনি দেন, আহারও তিনি দেন’। বড় বিশ্বাসী মানুষ আমজাদ। বললাম, এতোদিন ধরে রিকশা চালান, রিকশা কি নিজের? তিনি বলেন, না। নিজে রিকশা কিনে কী লাভ। আজ দম ফুরাইলে কি হবে আমার রিকশার? বললাম, আপনি তোফায়েল আহমদের এলাকার মানুষ, তার কাছে গিয়ে অন্য কোনো একটা কাজের ব্যবস্থা করে নিতে পারেন না! তিনি তো খুব প্রভাবশালী মানুষ। তাছাড়া আপনিও তো আওয়ামী লীগ করেন। এখন তো আপনার বয়স হয়েছে। আর কতো রিকশা চালাবেন?

আমজাদ বলেন, তোফায়েল সাহেব এখন অনেক ব্যস্ত মানুষ। তাছাড়া আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কদর ভোটের সময়। ভোট গেলে পাখি উড়ে যায়। আমজাদ হোসেনের কাছে জানতে চাই আপনার দল ক্ষমতায়। যারা ক্ষমতায় থাকে তারা নাকি খালি সবকিছু লুটেপুটে খায়?

সবাই কি আর খায়? খায় কয়জন। বদনাম হয় সবার। শেষে জানতে চাই, আপনার কি ক্ষমতাবান হতে ইচ্ছে করে না? তার অকপট উক্তি: আমি অল্প সময়ের জন্য এমন ক্ষমতাবান হতে চাই যাতে একটি রাস্তার নাম বদলে দিতে পারি।

আমি বলি, কোন রাস্তার নাম বদলাতে চান এবং কী নাম দিতে চান?

ভিআইপি রোডের নাম বদলে দিতে চাই, সিসিবিসি অর্থাৎ ছোটচোর বড়চোর।

আপনার এই অদ্ভুত বাসনার কারণ?

তার জবাব, যাদের ভিআইপি বলা হয় তাদের বেশির ভাগ হয় ছোটচোর, না হয় বড়চোর। চোর না হলে ভিআইপি হওয়া কঠিন।

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com