দেশের মেয়েরা এখন আর বোঝা নয়

প্রকাশের সময় : 2018-07-25 19:04:27 | প্রকাশক : Administrator
�দেশের মেয়েরা এখন আর বোঝা নয়

ইফতেখারুল অনুপম, টাঙ্গাইলঃ বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। জাতীয় কবির কবিতার মতো দেশের নারীরা পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশের নারীরা যখন প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার, মন্ত্রী, সচিব, ডিসি, এসপি, ম্যাজিস্ট্রেট, ইউএনও, এসিল্যান্ড তখন গ্রামের সাধারণ নারীরা পিছিয়ে থাকবে কেন? তারাও স্বামীর সংসারে গিয়ে কারও মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।

গ্রামের এই সাধারণ নারীরা আজকাল হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল পালনের পাশাপাশি ক্ষুদ্র কুটির শিল্পে কাজ করে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন। মধুপুর উপজেলার দড়িহাতীল (তালুকপাড়া) গ্রামের পল্লী চিকিৎসক শফিকুল ইসলামের স্ত্রী সুমাইয়া ইসলাম সাথী একটি উদাহরণ।

সাথী আজ ঘরে বসে না থেকে আধুনিক যুগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পুতির ব্যাগ তৈরি ও প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। গ্রামের অন্য নারীকে এ কাজে সম্পৃক্ত করতে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য গড়ে তুলেছেন ‘সাথী পুতির ব্যাগ তৈরির স্কুল’। সাথী সন্তান পালনের পাশাপাশি একদিকে রং-বেরঙের পুতি দিয়ে মেয়েদের ভ্যানিটি ব্যাগ, পার্টস (হাত ব্যাগ) ও ফুলদানি তৈরি করে বিক্রি করছেন। অপরদিকে আগ্রহী নারীদের প্রশিক্ষণও দিচ্ছেন। পুতির ব্যাগ তৈরী ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সাথী আজ অনেকটাই স্বাবলম্বী। তাকে আর স্বামীর কাছে হাত বাড়াতে হয় না। উল্টো তিনি স্বামীকেই অনেক সময় সহযোগিতা করতে পারেন।

মধুপুর থানা মোড় থেকে চাপড়ি রোডের তালুকপাড়া নামক পাকা রাস্তার পশ্চিম পাশে গোয়ালা বাড়িতে ‘সাথীর পুতির ব্যাগ তৈরির স্কুল’ চোখে পড়বে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চলে পুতির ব্যাগের কাজ ও প্রশিক্ষণ। সুমাইয়া ইসলাম সাথীকে ঘিরে আঁখি খাতুন, আমিনা খাতুন, রাহিমা বেগম, নার্গিস আক্তার, হাজেরা বেগম, লিজা খাতুন, তানিয়া আক্তার, নুরজাহান বেগমসহ ১০-১৫ নারী কাজ করছেন। সাথী দেখিয়ে দিচ্ছে, আর অন্যরা সে অনুযায়ী পুতি গাঁথছেন। তারা বেশিরভাগ ভ্যানিটি ব্যাগ ও পার্টস তৈরির কাজ শিখছেন। কেউ পুতি গাঁথছেন, কেউ পাতলা কাপড় লাগাচ্ছেন। আবার কেউ ব্যাগের মধ্যে জিপার লাগাচ্ছেন।

‘সাথীর পুতির ব্যাগ তৈরির স্কুলে’ গিয়ে কথা হয় উদ্যোক্তা সুমাইয়া ইসলাম সাথীর সঙ্গে। সাথী জানান, ৫-৬ বছর আগে ক্ষুদ্র কুটির শিল্পে পুতির ব্যাগ তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেই ঘরে বসে কাজ শুরু করেন। এ কাজে আস্তে আস্তে সফলতাও আসতে থাকে। সাথীর এ কাজে সার্বিক সহযোগিতা করেন তার স্বামী শফিকুল ইসলাম। সে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, ঘাটাইল ও মধুপুর থেকে ভ্যানিটি ব্যাগ ও পার্টস তৈরির সরঞ্জাম পুতি, প্লাস্টিকের সুতা, পাতলা কাপড় ও জিপার কিনে এনে দেন।

তৈরিকৃত ভ্যানিটি ব্যাগ ও পার্টস আশপাশের গ্রামের মেয়েরা তা কিনে নেয়। অবশিষ্ট ভ্যানিটি ব্যাগ ও পার্টস মধুপুরের বিভিন্ন কসমেটিক্সের দোকানে পাইকারি বিক্রি করেন। প্রতিটি ভ্যানিটি ব্যাগ ৫শ’ টাকা থেকে এক হাজার টাকা এবং প্রতিটি পার্টস ২শ’ টাকা থেকে ৫শ’ টাকায় বিক্রি করা হয়। খরচ বাদে সাথীর প্রতি মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় হচ্ছে।

সুমাইয়া ইসলাম সাথী আরও জানান, পুতির ব্যাগের কাজ শিখলে নিজের সংসারও চলে অপরদিকে অবসর সময়টুকু কাজে লাগিয়ে বাড়তি আয়ও হয়। সাথীকে দেখে ঐ গ্রামের অনেক মেয়ে আজ পুতির ব্যাগের কাজ শেখার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তারা অবসরটা অবহেলায় না কাটিয়ে পুতির ব্যাগ তৈরি করছেন।

প্রশিক্ষণার্থী আবিদা সুলতানা আঁখি জানান, পুতির ভ্যানিটি ব্যাগ ও পার্টস তৈরির কাজ শিখলে পরিবারের মেয়েদের ব্যাগের চাহিদা মিটবে। যা বাজার থেকে অধিকমূল্যে কিনতে হতো। তাছাড়া নিজে ব্যাগ তৈরি করতে পারি, এটা আত্নীয়স্বজনরা জানলে তারাও ব্যাগ তৈরি করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করবেন।

সাথীর স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, পর্দার মধ্যে থেকেও মেয়েরা অনেক কাজই করতে পারেন। কুটির শিল্পের কাজ কোন অংশেই অসম্মানের নয়। ধামাবাশুরী নুরানী তালিমুল কোরআন মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক আব্দুল জলিল জানান, মেয়েদের অবহেলা না করে সাথী আক্তারের মতো কুটির শিল্পে কাজ করার সুযোগ দিলে অনেকেই সমাজে কল্যাণ বয়ে আনতে সক্ষম হবে।

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com