মহা হাস্যকর ফুটবলের ফিফা র্যাংকিং
প্রকাশের সময় : 2018-07-13 12:11:26 | প্রকাশক : Admin
প্রভাষ আমিন: মিথ্যা নাকি তিন প্রকার- মিথ্যা, ডাহা মিথ্যা ও পরিসংখ্যান। এবারের বিশ্বকাপের খেলা দেখার পর মনে হচ্ছে হাস্যকরেরও তিন ক্যাটাগরি আছে- হাস্যকর, মহা হাস্যকর এবং ফিফা র্যাংকিং।
বিশ^কাপে মোট ৩২টি দল খেলছে। যারা কোটা ব্যবস্থা মানতে চান না, তারা নিশ্চয়ই চাইবেন ফিফা র্যাংকিংয়ের সেরা ৩২টি দলই বিশ্বকাপ খেলুক। কিন্তু তা কখনোই হয় না। ফিফা আবার আমার মতো কোটা ব্যবস্থার সমর্থক। তারা বিশ্বকাপকে সত্যি সত্যি বিশ্বকাপ করতে চান। যাতে বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চলেরই কোনো না কোনো দল বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায়, সে জন্যই বিশ্বকাপে র্যাংকিংয়ের কোনো বিবেচনা নেই।
বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের বাছাই পর্ব শেষে নির্ধারিত হয় ৩২ দল। তাই তো বিশ্বকাপে ফিফার র্যাংকিংয়ের শীর্ষে থাকা জার্মানি যেমন ইউরোপের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পায়, তেমনি র্যাংকিংয়ে ৬৭ তে থাকা সৌদি আরবও এশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করে। কোটা প্রথার কারণেই র্যাংকিংয়ে ৯ নাম্বারে থাকা চিলি বিশ্বকাপের দর্শক, আর ৬১ নাম্বারে থাকা জাপান বিশ্বকাপ কাঁপিয়ে দেয়।
ফিফা র্যাংকিংকে কেন মহা হাস্যকরেরও বেশি বলছি, যারা খেলা দেখছেন তারা নিশ্চয়ই বোঝে গেছেন। প্রতিদিন রাশিয়ার বিভিন্ন স্টেডিয়ামে প্রমাণিত হচ্ছে, কাগজে-কলমের র্যাংকিং কিছু না, মাঠে কেমন খেলছেন, সেটাই শেষ কথা। নইলে র্যাংকিংয়ের শীর্ষে থাকা ডিফেন্ডিং বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি প্রথম ম্যাচেই ১৫ নাম্বার মেক্সিকোর কাছে হেরে যায়! দ্বিতীয় ম্যাচে ২৪ নাম্বার সুইডেনের সাথে অতিরিক্ত সময়ের গোলে নিজেদের আশা বাঁচিয়ে রেখেছিল জার্মানি। র্যাঙ্কিং যে সত্যি সত্যি হাস্যকর সেটা প্রমাণ করেছে স্বাগতিক রাশিয়া; একবার নয়, পরপর দুই ম্যাচে। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই তারা সৌদি আরবকে হারিয়েছে ৫-০ গোলে। অথচ বিশ্বকাপের দলগুলোর মধ্যে রাশিয়াই র্যাংকিংয়ের তলানিতে, ৭০। সৌদি আরবের অবস্থাও খুব ভালো নয়, ৬৭। সবাই নিশ্চয়ই ৬৭ নাম্বার আর ৭০ নাম্বার দলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই আশা করেছিলেন।
কিন্তু হলো কি, ৫-০ ব্যবধানের একতরফা ম্যাচ। পরের ম্যাচেও ৭০ নাম্বার রাশিয়া ৩-১ গোলে হারিয়ে দিল ৪৫ নাম্বার মিশরকে। র্যাংকিংয়ের এক নাম্বারে থাকা জার্মানির বিদায়, ২ নাম্বারে থাকা ব্রাজিলও অস্বস্তিতে। র্যাংকিংয়ে ১৭, ১৮ আর ১৯ নাম্বারে থাকা হল্যান্ড, ওয়েলস এবং ইতালি বিশ্বকাপে দর্শক; ৪৮ নাম্বার নাইজেরিয়ার মুসা একাই মাতিয়ে দেন বিশ্বকাপ।
র্যাংকিংয়ের মান রেখেছে তিন নাম্বার বেলজিয়াম আর চার নাম্বার পর্তুগাল। কিন্তু মজাটা হলো এই দল দুটির পারফরম্যান্স আছে, র্যাংকিং আছে; কিন্তু আলোচনায় নেই। ফেবারিটদের তালিকায়ও নেই তাদের নাম। ফেবারিট যথারীতি জার্মানি, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ৭ নাম্বার ফ্রান্স, ১০ নাম্বার স্পেনও।
এবারের বিশ্বকাপ ফিফা র্যাংকিংকে মহা হাস্যকর বানিয়ে ছেড়েছে। বড় দল আর ছোট দলে ব্যবধান টেরই পাওয়া যাচ্ছে না। আসলে র্যাংকিং নিছক সংখ্যা আর কাগজ। মাঠে কে কেমন খেলবে; সেটাই আসল কথা। আর বিশ্বকাপ র্যাংকিং দিয়ে হয় না। অনেক খেলোয়াড় চারবছর চুপচাপ, কিন্তু জ¦লে ওঠেন বিশ্বকাপ এলেই। বছরজুড়ে আলোচনায় রোনালদো, মেসি, নেইমার আর সালাহ। কিন্তু বিশ্বকাপ এলেই উঠে আসেন মুসা, লুকাকু, কুতিনহোরা।
৩ লাখ জনসংখ্যার পুচকে আইসল্যান্ড এবার প্রথম বিশ্বকাপ খেলছে, তাদের র্যাংকিং ২২। আর ১৬ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ, বিশ্বকাপ এলে যে দেশ নাওয়া-খাওয়া ভুলে ফুটবল নিয়ে মেতে থাকে; সেই বাংলাদেশের র্যাংকিং ১৯৪। আহা আমাদের জীবনে কি কখনো বাংলাদেশকে বিশ্বকাপকে খেলতে দেখব? লেখক : হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ